শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
দিদার এলাহী সাজু, বিশেষ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জে সংশ্লিষ্টদের ভুল ডিজাইনের কারণে আটকে গেছে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ। ফলে নড়বড়ে কয়েক টুকরো কাঠের ওপর ভর করে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নবাসী। যাতায়াতের বিকল্প রাস্তা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো-ই এখন ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা। এ অবস্থায় এখানে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
জানা যায়, প্রায় ৫ বছর পূর্বে স্নানঘাটে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়। ক্লিনিকটি স্নানঘাট বাজারের একটি খালের পাশে অবস্থিত। কিন্তু ওই খালের উপর কোন ব্রিজ না থাকায় সেবা প্রার্থীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। পরে স্থানীয় উদ্যোগে খালের উপর একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। পরবর্তিতে দিনে দিনে কাঠের ওই সাঁকোটিও দুর্বল হয়ে পড়ে। সেবা প্রার্থীরা আবারও পড়েন দুর্ভোগে। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়েই চলাচল করতে হয় তাদের। একপর্যায়ে বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জ-১ আসনের তৎকালীন এমপি এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর। তিনি তখন এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এমপি কেয়া চৌধুরী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীর দিকে তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ তাজ উদ্দিনের নিকট ফোন করে তাৎক্ষণিক ভাবে ওই ব্রিজটি সম্পর্কে জানতে চান। তখন মৌখিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ব্রিজটির অনুমোদন হয়। চলতি বছর বরাদ্দ আসার পর দেখা যায় ‘ড্রয়িং’ অনুযায়ী ব্রিজটির দৈর্ঘ্য অনেক বেশী। ব্রিজটি বাস্তবায়ন করতে হলে ক্লিনিকের মূল অংশ অনেকটাই ভেঙ্গে ফেলতে হয়। ততদিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজউদ্দিন অন্যত্র বদলী হয়ে যান। এছাড়াও দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সংসদীয় আসনটিও শূন্য হয়ে যায়।
এ অবস্থায় সম্প্রতি উপজেলা পিআইও অফিস থেকে ব্রিজের ডিজাইন ( ড্রয়িং) সংশোধন করে আরেকটি প্রস্তাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠালেও সংশ্লিষ্টদের ভুল ডিজাইনের কারণে আজও আটকে আছে ব্রিজ নির্মাণের কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো পাড়ি দিয়েই প্রতিনিয়ত ক্লিনিকে যাতায়াত করছেন সেবা প্রত্যাশীরা। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা এক নারী জানান, ক্লিনিকে প্রায়ই যেতে হয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে খুবই ভয় লাগে।
খন্দকার পারভেজ নামে এক ব্যক্তি জানান, কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে রোগীদের অনেক কষ্ট হয়। এমনকি একাধিকবার খালে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।
ক্লিনিকের সিএইচসিপি অফিসার বিজন সূত্রধর জানান, এই ক্লিনিকের রোগীর সংখ্যা বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পাড়ি দিয়ে রোগীদের ক্লিনিকে আসতে হচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক রাহিন জানান, ইউনিয়নের বরাদ্দ থেকে ছোট-খাটো একটা কালভার্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বাহুবল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ভুল ডিজাইনের কারণে ব্রিজ নির্মাণ আটকে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে পরিপূর্ণ তথ্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন।